অনলাইন ডেস্ক :
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ৩৫ জেলার প্রায় ৬৩ হাজার ৬৩ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক। এসব ফসলের মধ্যে ধান, ভুট্টা, সবজি, পাট ও পান রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা বলে জানান মন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৩১ জন। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এ ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফসলের এই ক্ষতিতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জনিয়েছেন তিনি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আক্রান্ত ফসলি জমির মধ্যে বোরো ধান ৫৫ হাজার ৬০৯ হেক্টর, সবজি তিন হাজার ৬৬০ হেক্টর, ভুট্টা ৬৭৭ হেক্টর, পাট দুই হাজার ৩৮২ হেক্টর ও ৭৩৫ হেক্টর পান রয়েছে। আক্রান্ত ৩৫ জেলা হচ্ছে- নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, ল²ীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর। ক্ষতির ধরন ও শতকরা হার তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ বোরো ধান হার্ড ডাফ ও পরিপক্ব অবস্থায় বাতাসে হেলে পড়েছে। যার দুই শতাংশ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সবজির ক্ষেত্রে মাচা ভেঙে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বাতাসের কারণে শাক-সবজি ক্ষতি হয়েছে যার ৯ শতাংশ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অধিকাংশ ভুট্টা মোচা অবস্থায় বাতাসে হেলে পড়েছে, এর ১৫ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে। দমকা বাতাসে পাট হেলে বা ভেঙে পড়েছে। যা শতকরা হারে পাঁচ শতাংশ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দমকা বাতাসে পানের বরজ ভেঙে পড়েছে। যার এক শতাংশ ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। ঘূর্ণিঝড় ফণী আসার আগে ও চলাকালীন কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীন সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তুলে ধরেন আবদুর রাজ্জাক। ফণী চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের অঞ্চল, জেলা, উপজেলা ও বøক পর্যায় থেকে আক্রান্ত ফসলি জমির তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে যাতে আটকে যাওয়া পানি জমি থেকে দ্রæত নেমে যায় সে জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শতকরা ৮০ ভাগ পরিপক্ব অবস্থায় আছে এমন ধান কেটে ফেলা ও হেলে পড়া ধান দ্রæত কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আউস ক্ষেতে গ্যাপ পূরণের জন্য ঘণগোছা থেকে চারা উত্তোলন করে ফাঁকা জায়গায় রোপণ, পানের বরজের বেড়া নির্মাণ এবং লতা কাঠিতে তুলে দেয়া, সবজি ক্ষেতের জমে থাকা পানি দ্রæত নিষ্কাশনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সবজি ক্ষেতের চালা বা মাচা মেরামতের পরামর্শ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে সবজি বিষ কেনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নষ্ট হওয়া গাছের গোড়ায় নতুন চারা লাগিয়ে শূন্যস্থান পূরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে পরামর্শগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় বীজ, সার ও আর্থিক সহায়তা দেয়ার কর্মসূচি নেয়া হবে। পরবর্তী খরিপ ২০১৯-২০ মৌসুমে রোপা আমন ধানের বীজ বা চারা উৎপাদন ও বীজ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করার পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও বলেন, রবি ২০২৯-২০ মৌসুমে বিনামূল্যে বোরো ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, চিনা বাদাম, মুগ চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরণের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি নেয়া হবে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজি চাষের জন্য পারিবারিক পুষ্টির অংশ হিসেবে বিনামূলে বিভিন্ন সবজি বীজ বিতরণ কর্মসূচি নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে গত ৪ মে সকালে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ঢাকা-ফরিদপুর অঞ্চল পেরিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ এটি লঘুচাপে পরিণত হয়। ফণী ধেয়ে আসায় পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ মে সকাল থেকে পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর ও চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়।
|