দক্ষিণাঞ্চলে রসালো মৌসুমী ফল তরমুজ ও ফুটির (বাঙ্গি) বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে ৩৮ হাজার ৩৩৯ হেক্টর জমিতে ফলেছে তরমুজ ও ফুটি। যারমধ্যে ১৩ হাজার ২৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত তরমুজ ও ফুটি ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে। বাকি জমির ফলনও বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে প্রান্তিক চাষীদের দাবি, ফলন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। মধ্যস্বত্তভোগী আর আড়তদাররা কমমূল্যে চাষীদের কাছ থেকে তরমুজ আর ফুটি ক্রয় করে চড়া দামে বাজারে বিক্রি করছেন। বরিশাল কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় তরমুজ ও ফুটি আবাদ লাভজনক হয়ে ওঠায় চাষীরা মৌসুমী ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ কারণে বিগত বছরের তুলনার তরমুজ ও ফুটি আবাদ এবং ফলন দুটোই বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তরমুজের আবাদ। বিভাগের ছয় জেলায় ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে তরমুজ এবং এক হাজার ৪২৮ হেক্টর জমিতে ফুটির আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ছয় জেলার ১২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির তরমুজ ও ৬৭৭ হেক্টর জমির ফুটি বাজারে এসেছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে পটুয়াখালীতে তরমুজ ও ফুটি উৎপাদন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ জেলার ২১ হাজার ৬৮২ হেক্টর জমিতে তরমুজ এবং ৬৪৩ হেক্টর জমিতে ফুটি আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির তরমুজ ও ৪৫০ হেক্টর জমির ফুটি বাজারে এসেছে। বিভাগের মধ্যে তরমুজ ও ফুটি উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভোলা। ওই জেলায় চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ৪৯১ হেক্টর জমিতে তরমুজ ও ৩২৭ হেক্টর জমিতে ফুটি আবাদ হয়েছে। ছয় হাজার হেক্টর জমির তরমুজ ও ১৫০ হেক্টর জমির ফুটি ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে। বরগুনা জেলায় এ বছর চার হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ এবং ১৮৩ হেক্টর জমিতে ফুটি আবাদ হয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় তরমুজ ও ফুটি আবাদ হয়েছে সব থেকে কম। ওই জেলায় ফলনও তুলনামূলকভাবে কমেছে। চলতি বছরে ঝালকাঠিতে ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ এবং ৩০ হেক্টর জমিতে ফুটি আবাদ হয়েছে। গত রবি মৌসুমে ঝালকাঠি জেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদন হয়েছিলো। বরিশাল জেলায় এবার ৩৯৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ এবং ১৫৭ হেক্টর জমিতে ফুটি আবাদ হয়েছে। পিরোজপুর জেলায় ১২১ হেক্টর জমিতে তরমুজ ও ৮৮ হেক্টর জমিতে ফুটি আবাদ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাওফিকুল আলম জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে তরমুজ ও ফুটির আবাদ এবং ফলন দুটোই বেড়েছে। এবছর আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে গত কয়েকদিনের বৃস্টিতে তরমুজের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে তাই মধ্যবর্তী সময়ে তরমুজ ও ফুটি বাজারজাত করা হয়েছে। উপ-পরিচালক আরও বলেন, বরিশাল অঞ্চলে দূর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আশংকাও বেশি। কিন্তু তার মধ্যেও গোটা দক্ষিণাঞ্চলে মৌসুমী ফল তরমুজ ও ফুটির আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ ও ফুটি উৎপাদনের জন্য উপযোগী। বিশেষ করে ভোলা, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার মাটি তরমুজ চাষীদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।