কৃষি উন্নয়নে দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
তারিথ
: ১৪-১১-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক,ফাইল ছবি :
কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা নিতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের আর উপজেলা কৃষি অফিসে ছুটতে হবে না। বরং তাদের দোরগোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছে দিতে সরকার দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষক সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছে। সেখান থেকেই কৃষি বিষয়ক সব ধরনের পরামর্শ ও সেবা নিতে পারবেন কৃষকরা। তাতে তাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাড়বে উৎপাদনশীলতা। মূলত ওসব কেন্দ্র কৃষি সেবার ওয়ান স্টপ সেন্টার হিসেবে স্থাপন করা হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ওসব কেন্দ্র ভূমিকা রাখবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর (পাইলট) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে দেশের ২১টি জেলার ২৪টি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২০টি ইউনিয়নে আরো ২০টি কৃষক সেবা কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপিত কৃষক সেবা কেন্দ্র নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। কারণ আগে কৃষকরা প্রথাগত চাষাবাদ করার কারণে ফলনও মিলতো কম। আর চাষাবাদ শুরুর সময় পরামর্শ নিতে বা সার ও বীজ সংগ্রহের জন্য কৃষি অফিসে যেতে অনেক সময় লাগতো। কিন্তু সে ধরনের এখন কোনো ধরনের দুর্ভোগ ছাড়াই সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারছে কৃষকরা। ফলে তাদের উৎপাদনশীলতাও বাড়ছে। সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয়ের অধীন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে ওসব কৃষি কর্মকর্তার দাপ্তরিক সেবাদান ও সপরিবারে বসবাসের কোনো সুযোগ না থাকায় এতোদিন দরকারের সময়ে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে কৃষকদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। কিন্তু এখন কৃষক সেবা কেন্দ্র থেকে কৃষকদের কৃষিসংক্রান্ত নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। জমির ফসলকে রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়া থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পর্যন্ত নানা বিষয়ে পরামর্শ পাবেন কৃষকরা। তাছাড়া সরকারি প্রণোদনায় বিতরণকৃত সার ও উন্নত মানের বীজও সেখানে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ওসব কেন্দ্রে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক অবস্থানের জন্য পারিবারিক আবাসনের সুবিধাও রাখা হয়েছে, যাতে তারা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া থেকে শুরু করে কৃষিসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। সূত্র আরো জানায়, কৃষক সেবা কেন্দ্রের তিনতলার সুসজ্জিত ভবনের নিচতলায় থাকছে কৃষক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ কেন্দ্র। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অফিস ও সব ধরনের সুবিধাসহ পারিবারিক সরকারি বাসস্থান। তাছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সৌর প্যানেল সুবিধার পাশাপাশি থাকছে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সুযোগও। তাছাড়া ওসব কেন্দ্রে ফসল সংগ্রহ-উত্তর নিরাপদ বাজারজাতের কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ সুবিধা ও কৃষি তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতকরণের জন্য ডাটাবেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এদিকে এ বিষয়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. একেএম শামীম জানান, দেশের কৃষি এখন বাণিজ্যিক ধারায় রূপান্তর হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কৃষিশস্য উৎপাদনে পরিচর্যা ও পরামর্শ দরকার হয় বেশি। সেজন্য কৃষকের সঙ্গে সম্প্রসারণকর্মীদের যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন। কেন্দ্রগুলো চালু হলে কৃষকের আধুনিক কৃষি তথ্যসেবা সহজলভ্য হবে। পাল্টে যাবে গ্রামীণ কৃষির চিত্র। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত নকশা অনুযায়ী ভবনগুলো আধুনিক ও উন্নত মানের করে নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যনিরাপত্তা বিধান সম্ভব হবে। অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মহসীন জানান, বর্তমানে দেশের ২৪টি ইউনিয়নে পাইলটিং আকারে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষক সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। উৎপাদনের বিভিন্ন তথ্য কৃষকদের আগেই জানাতে পারলে কৃষক সহজে তার মাঠের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, শস্য বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন কৃৃষি প্রযুক্তি কৃষকদের ঘরে পৌঁছে দিতে কৃষক সেবা কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।