সমতল ভূমি হওয়ায় কুমিল্লা জেলার অন্যতম ধান উৎপাদনকারী উপজেলা হিসেবে চৌদ্দগ্রাম সুখ্যাত। এছাড়া নি¤œাঞ্চল থেকে দূরবর্তী হওয়ায় এখানকার কৃষকদের ধানের জমিন পানিতে কিংবা ছোট-খাট দুর্যোগে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাই প্রতি বছরেই বোরো মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এ উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের মুখে ফসলের ভালো উৎপাদনে মৃদু হাসি জেগে উঠে। বোরো মৌসুমের এখন শেষ সময়। কৃষকের ধান কাটার প্রস্তুতি এবং কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। আর মাত্র ক’দিন পরেই ধান কাটা শেষ হবে। কিন্তু গত কয়েকদিনের অব্যাহত ঝড় ও শ্রমিক সংকটে সেই শান্তির পরশ এবার বিষাদে পরিণত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় হালকা বাতাসের ঢেউয়ের সাথে মাঠে মাঠে পাকা ধানের ছড়া দুলছে। মাঠ ভরা ধানে কষক-কৃষাণীর মনে আনন্দের ঢেউ খেলছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর ধানের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েকদিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাঠে পড়ে থাকা পাকা ধান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থও হয়েছে। অনেক কৃষক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ভয়ে আধা পাকা ধান কেটে ফেলায় তাদের ফলন প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। পানির টাকা, শ্রমিকদের মজুরী মিলিয়ে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পারেনি বলে জানান অনেক কৃষক। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ খুব একটা ক্ষতি না করলেও চলমান শ্রমিক সংকটে মাঠে থাকা পাকা ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের প্রতিদিনের মূল্য ৬০০-৭০০ টাকায় উপনিত হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত। যেখানে ১ মণ ধানের দাম ৭০০-৮০০ টাকা সেখানে একজন শ্রমিকের পিছে তিনবেলার খাওয়াসহ ৯০০ টাকার মতো খরচ পড়ছে। এত টাকা খরচ করে পাকা ধান ঘরে তুলে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেনা কৃষক। দেখা যায় কৃষক উল্টো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকায় রয়েছে। পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় বাড়তি টাকা দিয়েও অনেকে শ্রমিক পাচ্ছে না। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা যায়, পাকা ধান ক্ষেতের মধ্যে পড়ে রয়েছে কিন্তু কাটার লোক নেই। অব্যাহত বাড়তি খরচের চাকায় পিষ্ট হয়ে কৃষকরা আজ দিশেহারা। তারা জানান, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ধান সহ ফসল ফলানোই হয়তো ছেড়ে দিতে হবে। উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামের ওসমান নামের এক কৃষক জানান, হাল চাষের খরচ, কীট নাশক ব্যবহারের খরচ, পানির মূল্য ও শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করে যা খরচ হয়েছে ধানের মূল্য কম হওয়ায় কাটার পরে তাও পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। ধানের দাম না বাড়লে ভবিষ্যতে ধানের চাষ করা বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, ইতিমধ্যেই অন্তত ৩০ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। আবহাওয়া আর সপ্তাহ খানেক ভালো থাকলে বাকী ৭০ শতাংশ ধানও মাঠ থেকে কৃষকদের ঘরে পৌঁছাবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম। তিনি আরও জানান, এ বছর উপজেলায় ১২,৪৪০ হেক্টর জমিনে বোরো ফসল লাগানো হয়েছে। সুন্দরভাবে ধান তুলতে পারলে ফলন বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।