দেশজুড়ে বোরোর বাম্পার ফলন হলেও ধানের যথাযথ দাম না পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। এক মণ ধান উৎপাদন করতে যেখানে কৃষকের খরচ হয়েছে ৭শ’ টাকার মতো, সেখানে এখন ওই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ’ টাকা মণ দরে। পাশাপাশি গত কয়েকদিন ধরে দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ধান কাটা, মাড়াই ও ধান শুকানো ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ভেজা ধান কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। এমনিতেই বোরো ধান কাটতে হাওরে ব্যাপক শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। তার উপর আকাশে মেঘ দেখলে শ্রমিকরা বজ্রপাতের ভয়ে মাঠে ধান কাটতে যেতে চায় না। এমন পরিস্থিতিতে পাকা ধান কাটতে না পেরে অনেক কৃষকই বিপাকে। হাওরাঞ্চলের ভুক্তভোগী একাধিক ভুক্তভোগী কৃষক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জসহ সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের মতে, যেখানে একমন ধানের উৎপাদন খরচ সাড়ে ৬শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা, সেখানে এখন একমন ধান বিক্রি করা হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকায়। ধান বিক্রির সময় বরাবরই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষকরা। এমন পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করে সরকার আগাম কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করলে কৃষক একদিকে যেমন ন্যায্য মূল্য পাবে, অন্যদিকে আগামীতে ধান উৎপাদনে আগ্রহ বাড়বে। মূলত সারাবছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষকরা ধান উৎপাদন করলেও তার লাভ চলে যায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীর পকেটে। তাছাড়া হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকই সরকারের নানা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার যখন ধান ক্রয়ের সময় নির্ধারণ করেন, এর আগেই কৃষক ধান বিক্রি করে দেয়। ফলে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা লাভবান হয়। গত বছর আগাম বন্যায় ধান নষ্ট হওয়ার পর অনেকেই সরকারি সাহায্য পাননি। ফলে ঋণ করে বা অন্য উপায়ে টাকা সংগ্রহ করে এবার ধান উৎপাদনের পর সঠিক দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে বাজারে ধানের মূল্য অনেক কম হওয়ায় লাভ তো দূরের কথা, কৃষকের উৎপাদন খরচই উঠে আসছে না। ফলে বছরে একটি মাত্র ফসলের আবাদকারী হাওর এলাকার কৃষকদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে। বিগত দুই তিন বার হাওরের ফসল গেল পানিতে। আর গতবছর তো একটি ধানও পাওয়া যায়নি। এখন চলছে পাকা ধান কাটতে শ্রমিক সংকট। অথচ হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকদের ধান কাটতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে বা গ্রামাঞ্চলে মোটা ধান প্রতি মণ ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা মণ। অথচ গড়ে প্রতি মণ মোটা ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। যা ধানের বর্তমান বাজার দর থেকে ৭০/৮০ টাকার বেশি। সূত্র আরো জানায়, উৎপাদন খরচের চেয়ে ধানের দাম কম হলেও প্রান্তিক ও বর্গা চাষীরা দেনা পরিশোধসহ বিভিন্ন কারণে তাদের উৎপাদিত ধান কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে হবিগঞ্জ জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫শ হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৫শ হেক্টর বেশি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী তাতে চাল উৎপাদন ধরা হয়েছে ৫ লাখ মেট্রিক টন। এদিকে স্থানীয় জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধান ক্রয় করার জন্য এখনো কোনো সরকারি বরাদ্দ আসেনি। অথচ অধিকাংশ কৃষক উৎপাদিত ধান ইতিমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে। এর পর ধানের দাম বাড়ানো হলেও তাতে কৃষকরা উপকৃত হবে না। যদিও সরকাররকে সারাদেশকে নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।